**মাদারীপুর: ইতালি যাওয়ার আশায় লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার রাকিব মহাজন, মৃত্যুর পর পরিবারে শোক**
ইতালি যেতে পারলে পরিবারের জীবনে সচ্ছলতা আসবে, দূর হবে দুঃখ-কষ্ট—এমন স্বপ্ন নিয়ে মাদারীপুর থেকে অসংখ্য যুবক লিবিয়া পাড়ি জমিয়েছেন। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কেউ কেউ ইতালি পৌঁছাতে পারলেও নৌকা ডুবিতে মৃত্যু, দালালের হাতে আটকে থাকা, টাকা দিয়ে ফেরত আসা, আবার টাকা দিয়েও মৃত্যুর মুখে পড়া—এসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সম্প্রতি, মাদারীপুরের রাকিব মহাজন নামের এক তরুণ দালালদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তাকে মুক্তি দিতে তার পরিবার ৪২ লাখ টাকা দিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ছেলের লাশই পেয়েছেন, জীবিত রাকিব ফিরে আসেনি।
রাকিবের পরিবার জানায়, তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় মাদারীপুর সদর উপজেলার পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজনের ছেলে রাকিব মহাজন বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের হাতে ধরা পড়েন এবং সেখানে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিপণের জন্য পরিবার কয়েক দফা টাকা দিলেও, রাকিবের মুক্তি মেলেনি।
রাকিবের আত্মীয়রা জানান, স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর মৃধার প্রলোভনে পড়ে রাকিব প্রথমে ২৭ লাখ টাকায় ইতালি পাঠানোর চুক্তি করেন। কিন্তু সমুদ্রপথে লিবিয়া পৌঁছানোর পর রাকিবকে বন্দি করে রাখে লিবিয়ার দালালরা। এরপর তাকে বিক্রি করা হয় আরেক দালাল মাজেদ ফলিকার কাছে, এবং সেখানে আরও ১৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
মহাজন পরিবারের দাবি, রাকিবকে খাবার দেয়া বন্ধ করে দেয় দালালরা এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে একটি হাসপাতালে রেখে তারা পালিয়ে যায়। গত ২২ জানুয়ারি, দুপুর ১টার দিকে রাকিবের মৃত্যু হয়।
রাকিবের বাবা, নাজিম উদ্দিন মহাজন জানান, "আমার ছেলেকে দালালরা বিক্রি করেছে, তাকে বন্দি করে রেখে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে। আমার ছেলের মরদেহ দেখতে চাই। সরকার যদি সহযোগিতা না করে, তবে আমরা কিছুই করতে পারব না।"
এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দালালদের শক্তিশালী হাত রয়েছে, তারা প্রতিবাদ করার সুযোগ দেয় না। তাদের কঠোর বিচার না হলে, এ ধরনের মৃত্যু থামানো যাবে না। ৪২ লাখ টাকা দিয়েও রাকিবের মুক্তি মেলেনি, আর আড়াই বছর ধরে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
রাকিবের মা, হাসিয়া বেগম বলেন, "আমরা প্রথমে ২৭ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, তারপরেও আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানো হয়নি। পরে আরও ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ছেলেকে দালালরা বিক্রি করেছে। দালালদের নির্যাতনে আমার ছেলে মারা গেছে, এই ঘটনার বিচার চাই।"
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ভাস্কর সাহা বলেন, "রাকিবের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদারীপুর থেকে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা নতুন নয়, প্রতি বছর এখানকার অনেক মানুষ অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। দালালদের বিরুদ্ধে মামলা হলে, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু পরে আপোস হয়ে যাওয়ায় এই প্রবণতা কমছে না।"
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, "রাকিবের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নিহতের পরিবার জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত দিলে, দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"