প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে এসব বিষয় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে খুব দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
গতকাল শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং সংস্কারপ্রক্রিয়া সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন। এই সংলাপে বিভিন্ন দল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এবং কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে। প্রায় সব দলই দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রথমে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় এবং এরপর অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ হয়। আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীদের এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংলাপ শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজ আলম জানান, যেসব দল পূর্বের নির্বাচনে অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে।
মাহফুজ আলম আরও জানান, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব শিগগিরই ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি গঠনের বিধি অনুযায়ী যা যা করা প্রয়োজন, তা সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচনী কার্যক্রমের অন্যান্য কাজ শুরু হবে এবং এর পাশাপাশি সংস্কার কমিশনও তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, সংলাপে মূলত নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, গণহত্যার বিচার নিয়েও কথা হয়েছে। সংলাপে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক রাজনৈতিক দল আবারও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং তাদের রাজনীতি কীভাবে সীমিত করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের সংসদগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করার বিষয়ে দলগুলোর অভিমতও এসেছে।
বাসসের খবরে বলা হয়, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকে কীভাবে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সে বিষয়ে সরকার তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গণফোরামের প্রতিনিধিদল, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে, গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপ শেষে দলের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু জানান, তারা সংবিধান, বিচার বিভাগ, এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের তাগিদ দিয়েছেন তারা। এছাড়া, তারা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ আরও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
এদিকে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সংলাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি আরও জানান, এলডিপি আগেও সংস্কারের ১০৩টি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং গতকালের সংলাপে আরও ২৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।